নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪ | প্রিন্ট | 70 বার পঠিত
যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামরুল হাসান খন্দকারের নিয়োগ অনুমোদনে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। আগামী ১৩ জুনের মধ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নিয়োগ নবায়ন প্রস্তাব অনুমোদনের আদেশ চেয়ে কামরুল হাসান খন্দকারের করা একটি রীট পিটিশনের প্রেক্ষিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের প্রতি এই রুল জারি করে হাইকোর্ট।
যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান খন্দকার আইডিআরএ’র নিয়োগ না মঞ্জুর করা সংক্রান্ত আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ৩ জুন হাইকোর্টে একটি রীট (রীট নং-৭১০৭/২০২৪, তাং-০৩-০৬-২৪) পিটিশন দাখিল করেন। হাইকোর্টের বিচারপতি মুহম্মদ খুরশীদ আলম সরকার এবং বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের দ্বৈত বেঞ্চে এ দিনেই রীটটির ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পিটিশনকারি যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান খন্দকার তার আর্জিতে বলেন, আইডিআরএ সিইও পদে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের দেয়া নিয়োগ নবায়ন প্রস্তাব অনুমোদন না করায় তার অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে। তিনি আর্জিতে বীমা কর্তৃপক্ষের এই আদেশ বাতিল করে তার নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনে বীমা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদানের জন্য আদালতের প্রতি আবেদন জানান।
বিজ্ঞ আদালত বাদি ও বিবাদি পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে কেন বাদির নিয়োগ অনুমোদন করা হয়নি, আগামী ১৩ জুনের মধ্যে এর কারণ জানাতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের প্রতি রুল জারি করে হাইকোর্ট। আদালতে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হুমায়ন কবির, ফরজানা রহমান স্বপ্না, মাসুদ রানা মোহাম্মদ এবং সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল আলী আকবর খান। বাদির পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আশীস কর্মকার এবং ফয়সাল আহমেদ রুমি।
আদালত যমুনা লাইফের সদ্য নিয়োগকৃত ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোন নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। ফলে রীটের পূর্ণাঙ্গ শুনানি না হওয়া পর্যন্ত তার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোন বাধা থাকলো না। শুনানি শেষে আদালত ভারপ্রাপ্ত সিইও মো. শামছুদ্দিনকে রীটের পূর্ণাঙ্গ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যেতে বলেছে।
জানা গেছে, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গত ১৯ মার্চ যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান খন্দকারের নিয়োগ নবায়নের আবেদন না মঞ্জুর করে। পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য একটি রিভিউ পিটিশন করেন কামরুল ইসলাম। গত ৩ জুন এই রিভিউ পিটিশনের উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। রিভিউ পিটিশন নিষ্পত্তির আগেই বীমা কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ চিফ মার্কেটিং অফিসার (সিএমও) মো. শামছুদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে দায়িত্ব প্রদান করে এবং সদ্য নিয়োগকৃত ভারপ্রাপ্ত সিইওকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য কামরুল হাসানকে নির্দেশ দেয়। কামরুল হাসান তার দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে আদালতে যান এবং আইডিআরএ’র সিদ্ধান্তের বৈধ্যতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রীট করেন।
আইডিআরএ’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্রে জানা গেছে, বীমা প্রতিষ্ঠানের সিইও নিয়োগ বিধিমালায় উল্লেখিত শর্তসমূহ পূরণ না হওয়ায় কামরুল হাসানের নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়নি। সূত্র আরও উল্লেখ করেছে, কামরুল হাসানের শিক্ষাগত যোগ্যতায় ঘাটতি রয়েছে। তিনি যে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ দাখিল করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে তার স্বীকৃতি নেই।
জানা গেছে, কামরুল হাসান খন্দকারের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের সমতাকরণ ও বৈধতার প্রত্যয়নপত্র দাখিল না করা এবং দাখিল করা শিক্ষা সনদ ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় গত ১৯ মার্চ বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এই নিয়োগ প্রস্তাব না-মঞ্জুর করে।
কর্তৃপক্ষের পরিচালক (উপসচিব) আহম্মদ এহসান উল হান্নান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যানকে দেয়া হয়। এরপরও কামরুল হাসান খন্দকার বেশ কিছুদিন কোম্পানির সিইও পদে বহাল ছিলেন এবং দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
জানা গেছে, যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান খন্দকার তার বিদেশি এমবিএ ডিগ্রির মান সংশোধিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা-২০১২ এর (৩)(ক) অনুযায়ী সমতাকরণ করেননি। তাছাড়াও পরবর্তীতে দাখিলকৃত তার ইবাইস ইউনিভার্সিটির দুটি সনদপত্রের বৈধতার বিষয়েও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে পারেননি। উল্লেখিত দুটি কারণে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে কামরুল হাসানের নিয়োগ নবায়নের আবেদন না-মঞ্জুর করা হয়েছে।
আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, কামরুল হাসানের নিয়োগ নবায়নের আবেদন করা হয় ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর। আবেদনে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করা হয় ভারতের উত্তর প্রদেশের ডিমড ইউনিভার্সিটি থেকে ২০০২ সালে দূরশিক্ষণে এমবিএ পাস।
এই আবেদনের ২৯ দিন পর গত ৬ ডিসেম্বর আইডিআরএ-কে পাঠানো একটি চিঠিতে কামরুল হাসানের শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে ইবাইস ইউনিভার্সিটির দুটি সনদ দাখিল করা হয় এবং সেগুলো তার আবেদনে যুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়। ইবাইস ইউনিভার্সিটির সনদপত্র অনুসারে কামরুল হাসান খন্দকার বিএসএস পাস করেছেন ২০১৯ সালে এবং এমবিএ পাস করেন ২০২১ সালে। পরবর্তীতে কামরুল হাসানের বিদেশি এমবিএ ডিগ্রির মান সমতাকরণ এবং ইবাইস ইউনিভার্সিটির সনদপত্র দুটির বৈধতার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে বলা হয়। তবে কামরুল হাসান তার বিদেশি ডিগ্রির মান সমতাকরণ বা ইবাইস ইউনিভার্সিটির সনদপত্র দু’টির বৈধতার বিষয়ে কোনো প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে পারেননি। এদিকে আইডিআরএ কামরুল হাসানের ইবাইস ইউনিভার্সিটির সনদপত্র দুটির সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দেয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার এখলাছুর রহমান গত ২১ জানুয়ারি আইডিআরএকে জানায় কামরুল হাসান খন্দকারের দুটি সনদই ফেক (ভুয়া)।
Posted ৪:৩৬ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy